কবি আসাদ বিন হাফিজ
শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬
স্মৃতিচারণ: আশির দশক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক
আশির দশক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক
-আসাদ বিন হাফিজ
#স্মৃতিচারণ
ছাত্রজীবনে একটানা সাত-আট বছর মল্লিক ভাইয়ের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকার সুবাদে মল্লিক ভাইকে কাছ থেকে দেখার এক বিরল সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অনেক তিক্ত-মধুর সম্পর্কের স্মৃতি জমা হয়ে আছে এই বুকে। আমাদের সম্পর্কটা নেতা-কর্মীর নয়, ছিল বন্ধুত্বের। আমাদের মিরহাজীর বাগের সেই বেড়ার ঘরে বহুদিন আমরা একত্রে রাত্রি যাপন করেছি, এক বিছানায় ঘুমিয়েছি। মাসের পর মাস সেই ঘরে দু’জনের খাবার রেখে ভাবীসহ বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। গভীর রাতে বাসায় ফিরে সেই ঠান্ডা ভাত দু’জনে ভাগাভাগি করে খেয়েছি। সকালে ফজর পড়ে হয়তো লু&&ঙ্গ পরেই আমরা হাঁটতে বেরিয়েছি বা কারো সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগে বেরিয়েছি, এসে দেখি ভাবী দু’জনের ময়লা কাপড়গুলো ধুয়ে রোদে শুকাতে দিয়েছেন। বাংলা ভাষায় যাকে বলে ‘হরিহর আত্মা’ আমরা ছিলাম তাই। লোকজন আমাদের ডাকতো ‘মানিকজোড়’ বলে। আমাদের নাম দুটো সব সময় এক ব্রাকেটে উচ্চারিত হতো। যেখানে আসাদ আছে সেখানে মল্লিক থাকবেই, আর যেখানে মল্লিক আছে সেখানে আসাদও থাকবে, এটাই ছিল স্বতসিদ্ধ বিষয়। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজনও এটা জানতো এবং যখন-তখন আমার সাথে সে বাড়িতে মল্লিক ভাইয়ের উপস্থিতিতে কেউ অবাক হতো না।
ছাত্রজীবন শেষ করে আমি তামিরুল মিল্লাতে অধ্যাপনা শুরু করলাম। সংগঠন বললো বিআইসিতে জয়েন করতে হবে। মল্লিক ভাই আগেই বিআইসিতে জয়েন করেছিলেন। বিআইসি থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা কলম দেখাশোনা করতেন মল্লিক ভাই, আমাকে দেয়া হলো গবেষণা পত্রিকা পৃথিবী দেখার দায়িত্ব। আবারও এক অফিস, এক ঠিকানা। অফিসিয়ালি আবদুল মান্নান তালিব কলমের সম্পাদক আর জনাব এ. কে. এম নাজির আহমদ পৃথিবীর সম্পাদক থাকলেও সম্পাদনার মূল কাজ করতে হতো আমাদেরই। লেখকদের কাছে থেকে লেখা সংগ্রহ, সম্পাদনা, প্রেস যোগাযোগ, প্রম্নফ দেখা সবই করতে হতো এক হাতে। সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেলে সম্পাদকের অনুমতি নিয়ে প্রিন্টঅর্ডারও দিতাম আমরাই। বাংলাবাজারে ‘মনোরম প্রেস’ নামে একই প্রেসে ছাপা হতো কলম ও পৃথিবী। আমরা কেবল অফিসিয়াল দায়িত্ব হিসেবে নয়, আন্দোলনের স্বার্থ সামনে রেখেই এ কাজ আঞ্জাম দিতাম। এ কাজের কোন টাইমটেবল ছিল না। এই লেখকের বাসায় যাওয়া, ওই লেখকের বাসায় যাওয়া, তাদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি, তাদের সামনে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা, অফুরন্ত কাজ। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের ভাইয়েরা কে কি লিখবে, আন্দোলনের জন্য এ মুহূর্তে কোন বিষযে লেখালেখি গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করা, সেই দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া, সময়মত সে লেখা জমা দেয়ার জন্য বার বার তাগাদা দেয়া, ঢাকার বাইরের লেখকদের সাথে নিয়মিত পত্র যোগাযোগ, কাজের কি কোন শেষ আছে? এরপর আছে আরো কাজ। অফিসের কাজ শেষ হলে আমরা বসতাম সামগ্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন নিয়ে। শুরু হতো নানা চিন্তা-গবেষণা, আলাপ-আলোচনা এবং তা বাস্তবায়নের কাজ। এর কিছুদিন পর কলমের পাশাপাশি সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্বও পান মল্লিক ভাই। ফলে লেখকদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির এক অবারিত দ্বার খোলা ছিল আমাদের সামনে। আমাদের হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো আসলেই ছিল অনেক মধুর ও স্বর্ণালী। প্রাণের প্রবাহে সজীব ও উদ্দাম।
এর কিছুদিন পর আ.জ.ম ওবায়েদুল্লাহ ও মাসুমুর রহমান খলিলী খুলে দিলেন আরো এক নতুন দ্বার। জন্ম নিল কিশোরকণ্ঠ। ওবায়েদ ভাইয়ের তাড়নায় বিনা পারিশ্রমিকে মাসের পর মাস কিশোরকণ্ঠ সম্পদানা করে দিয়েছি। কেউ একজন জমা লেখাগুলো বাসায় দিয়ে যেতো, সম্পাদনা শেষে আবার তা পাঠিয়ে দিতাম কিশোরকণ্ঠের ঠিকানায়। ওবায়েদ ভাইয়ের নির্দেশে প্রতি সংখ্যায়ই কিছু না কিছু লিখতেও হতো। এরপর অভিন্ন স্বপ্ন নিয়েই তিনি বের করলেন আরো একটি পত্রিকা, মাসিক অঙ্গীকার ডাইজেস্ট। সেখানেও লিখতে হতো পরিকল্পিতভাবে। এভাবেই কাটছিল ব্যস্ত সময়। কলম, পৃথিবী, সোনার বাংলা, কিশোরকণ্ঠ, অঙ্গীকার ডাইজেস্ট সবটাতেই আমরা মিলেমিশে সময় দিয়েছি, পরস্পর পরামর্শ করেছি, একে অন্যের সহযোগিতা করেছি, আর এসবই করেছি একটি সফল সাহিত্য আন্দোলনের স্বপ্ন ও সংকল্প নিয়ে। এমনকি দৈনিক সংগ্রামের সাহিত্য পাতা এবং মাসিক ফুলকুঁড়িতে যেন আমাদের ভাইদের লেখা বেশি করে ছাপা হয় সে জন্য নিজেরা লেখা সংগ্রহ করে তা সাজজাদ হোসাইন খান ও জয়নুল আবদীন আজাদ বা শরীফ আবদুল গোফরান ভাইয়ের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। সাহিত্য আন্দোলনের জন্য পত্রিকা হাতে থাকাটা যে কত জরুরি সে সময় আমরা তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি। বিপরীত উচ্চারণ ও পরে বাংলা সাহিত্য পরিষদের মতো সংগঠন আর ওইসব পত্রিকা ছিল বলেই আশির দশকে ইসলামী আন্দোলনের সপক্ষে একদল কলম সৈনিক গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল, যাতে মূখ্য ভূমকা রেখেছিলেন মল্লিক ভাই।
আশির দশক নিয়ে এ দেশের ইসলামী আন্দোলন যুগ যুগ ধরে গর্ব করতে পারবে বিংশ শতাব্দীতে সাহিত্যে নতুন করে ইসলামী ধারা প্রবর্তন করার জন্য। কিন্তু সেই ধরাবাহিকতা পরবর্তীতে আর বজায় থাকেনি, কারণ আন্দোলন সম্পর্কিত লোকগুলো দাওয়াতী কাজের উপযুক্ত জায়গা থেকে ছিটকে পড়েছিল মল্লিক ভাই বেঁচে থাকতেই। কার্যকারণ যাই থাক না কেন, সাহিত্য আন্দোলনের জন্য পত্রিকা হাতে থাকাটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ বেঁচে থাকতেই সেটা মল্লিক ভাই টের পেয়েছিলেন তীব্রভাবে। যে সোনার বাংলা ও কলম দিয়ে সাহিত্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন মল্লিক ভাই এক সময় সেখান থেকে সরে এলেন তিনি। আমি বেরিয়ে এলাম পৃথিবী থেকে। আ. জ. ম ওবায়েদুল্লাহকে খুঁজে পাওয়া গেল না কিশোরকণ্ঠের বারান্দায়। মল্লিক ভাইয়ের পর সোনার বাংলায় এসেছিলেন কবি সোলায়মান আহসান। কিন্তু তিনিও বেশিদিন থাকলেন না। অভিমানী সোলায়মান আহসান সোনার বাংলা থেকেই শুধু বিদায় নিলেন না, আন্দোলনে তার যে সক্রিয়তা ছিল সেখানেও ভাটা পড়লো। এসেছিলেন বুলবুল সরওয়ার, সেও একদিন সরে দাঁড়াল। এভাবে আসেত্ম আসেত্ম সাহিত্য আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিলেন তারা সবাই ছিটকে পড়লেন পত্রিকার জগত থেকে। এ অবস্থার আর পরিবর্তন ঘটেনি। এখন যারা সাহিত্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা সব ‘ঢাল নাই, তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার।’ তাদের হাতে কোন পত্রিকা নেই। লেখকদের কাছে যাওয়ার সূত্র বা মাধ্যম ছিল এই পত্রিকা। এই সূত্র হারিয়ে যাওয়ায় ভাটা পড়লো দাওয়াতী কাজে। লেখকদের কাছে টানার মাধ্যম না থাকায় তারা যেমন যখন তখন লেখকদের কাছে যাওয়ার সুযোগ পান না, লেখকরাও তেমনি তাদের কাছে আসার কোন প্রয়োজন বা গরজ বোধ করেন না। অবস্থাটা এখন এমন যে, লড়াকু সৈনিকরা ময়দান চষে বেড়ায় অস্ত্রহীন অবস্থায়, আর যাদের হাতে অস্ত্র আছে তারা ময়দানে আসার সময় পায় না। ফলে নতুন লেখকরা হাসান আলীম, মোশাররফ
-আসাদ বিন হাফিজ
#স্মৃতিচারণ
ছাত্রজীবনে একটানা সাত-আট বছর মল্লিক ভাইয়ের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকার সুবাদে মল্লিক ভাইকে কাছ থেকে দেখার এক বিরল সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অনেক তিক্ত-মধুর সম্পর্কের স্মৃতি জমা হয়ে আছে এই বুকে। আমাদের সম্পর্কটা নেতা-কর্মীর নয়, ছিল বন্ধুত্বের। আমাদের মিরহাজীর বাগের সেই বেড়ার ঘরে বহুদিন আমরা একত্রে রাত্রি যাপন করেছি, এক বিছানায় ঘুমিয়েছি। মাসের পর মাস সেই ঘরে দু’জনের খাবার রেখে ভাবীসহ বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। গভীর রাতে বাসায় ফিরে সেই ঠান্ডা ভাত দু’জনে ভাগাভাগি করে খেয়েছি। সকালে ফজর পড়ে হয়তো লু&&ঙ্গ পরেই আমরা হাঁটতে বেরিয়েছি বা কারো সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগে বেরিয়েছি, এসে দেখি ভাবী দু’জনের ময়লা কাপড়গুলো ধুয়ে রোদে শুকাতে দিয়েছেন। বাংলা ভাষায় যাকে বলে ‘হরিহর আত্মা’ আমরা ছিলাম তাই। লোকজন আমাদের ডাকতো ‘মানিকজোড়’ বলে। আমাদের নাম দুটো সব সময় এক ব্রাকেটে উচ্চারিত হতো। যেখানে আসাদ আছে সেখানে মল্লিক থাকবেই, আর যেখানে মল্লিক আছে সেখানে আসাদও থাকবে, এটাই ছিল স্বতসিদ্ধ বিষয়। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজনও এটা জানতো এবং যখন-তখন আমার সাথে সে বাড়িতে মল্লিক ভাইয়ের উপস্থিতিতে কেউ অবাক হতো না।
ছাত্রজীবন শেষ করে আমি তামিরুল মিল্লাতে অধ্যাপনা শুরু করলাম। সংগঠন বললো বিআইসিতে জয়েন করতে হবে। মল্লিক ভাই আগেই বিআইসিতে জয়েন করেছিলেন। বিআইসি থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা কলম দেখাশোনা করতেন মল্লিক ভাই, আমাকে দেয়া হলো গবেষণা পত্রিকা পৃথিবী দেখার দায়িত্ব। আবারও এক অফিস, এক ঠিকানা। অফিসিয়ালি আবদুল মান্নান তালিব কলমের সম্পাদক আর জনাব এ. কে. এম নাজির আহমদ পৃথিবীর সম্পাদক থাকলেও সম্পাদনার মূল কাজ করতে হতো আমাদেরই। লেখকদের কাছে থেকে লেখা সংগ্রহ, সম্পাদনা, প্রেস যোগাযোগ, প্রম্নফ দেখা সবই করতে হতো এক হাতে। সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেলে সম্পাদকের অনুমতি নিয়ে প্রিন্টঅর্ডারও দিতাম আমরাই। বাংলাবাজারে ‘মনোরম প্রেস’ নামে একই প্রেসে ছাপা হতো কলম ও পৃথিবী। আমরা কেবল অফিসিয়াল দায়িত্ব হিসেবে নয়, আন্দোলনের স্বার্থ সামনে রেখেই এ কাজ আঞ্জাম দিতাম। এ কাজের কোন টাইমটেবল ছিল না। এই লেখকের বাসায় যাওয়া, ওই লেখকের বাসায় যাওয়া, তাদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি, তাদের সামনে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা, অফুরন্ত কাজ। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের ভাইয়েরা কে কি লিখবে, আন্দোলনের জন্য এ মুহূর্তে কোন বিষযে লেখালেখি গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করা, সেই দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া, সময়মত সে লেখা জমা দেয়ার জন্য বার বার তাগাদা দেয়া, ঢাকার বাইরের লেখকদের সাথে নিয়মিত পত্র যোগাযোগ, কাজের কি কোন শেষ আছে? এরপর আছে আরো কাজ। অফিসের কাজ শেষ হলে আমরা বসতাম সামগ্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন নিয়ে। শুরু হতো নানা চিন্তা-গবেষণা, আলাপ-আলোচনা এবং তা বাস্তবায়নের কাজ। এর কিছুদিন পর কলমের পাশাপাশি সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্বও পান মল্লিক ভাই। ফলে লেখকদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির এক অবারিত দ্বার খোলা ছিল আমাদের সামনে। আমাদের হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো আসলেই ছিল অনেক মধুর ও স্বর্ণালী। প্রাণের প্রবাহে সজীব ও উদ্দাম।
এর কিছুদিন পর আ.জ.ম ওবায়েদুল্লাহ ও মাসুমুর রহমান খলিলী খুলে দিলেন আরো এক নতুন দ্বার। জন্ম নিল কিশোরকণ্ঠ। ওবায়েদ ভাইয়ের তাড়নায় বিনা পারিশ্রমিকে মাসের পর মাস কিশোরকণ্ঠ সম্পদানা করে দিয়েছি। কেউ একজন জমা লেখাগুলো বাসায় দিয়ে যেতো, সম্পাদনা শেষে আবার তা পাঠিয়ে দিতাম কিশোরকণ্ঠের ঠিকানায়। ওবায়েদ ভাইয়ের নির্দেশে প্রতি সংখ্যায়ই কিছু না কিছু লিখতেও হতো। এরপর অভিন্ন স্বপ্ন নিয়েই তিনি বের করলেন আরো একটি পত্রিকা, মাসিক অঙ্গীকার ডাইজেস্ট। সেখানেও লিখতে হতো পরিকল্পিতভাবে। এভাবেই কাটছিল ব্যস্ত সময়। কলম, পৃথিবী, সোনার বাংলা, কিশোরকণ্ঠ, অঙ্গীকার ডাইজেস্ট সবটাতেই আমরা মিলেমিশে সময় দিয়েছি, পরস্পর পরামর্শ করেছি, একে অন্যের সহযোগিতা করেছি, আর এসবই করেছি একটি সফল সাহিত্য আন্দোলনের স্বপ্ন ও সংকল্প নিয়ে। এমনকি দৈনিক সংগ্রামের সাহিত্য পাতা এবং মাসিক ফুলকুঁড়িতে যেন আমাদের ভাইদের লেখা বেশি করে ছাপা হয় সে জন্য নিজেরা লেখা সংগ্রহ করে তা সাজজাদ হোসাইন খান ও জয়নুল আবদীন আজাদ বা শরীফ আবদুল গোফরান ভাইয়ের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। সাহিত্য আন্দোলনের জন্য পত্রিকা হাতে থাকাটা যে কত জরুরি সে সময় আমরা তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি। বিপরীত উচ্চারণ ও পরে বাংলা সাহিত্য পরিষদের মতো সংগঠন আর ওইসব পত্রিকা ছিল বলেই আশির দশকে ইসলামী আন্দোলনের সপক্ষে একদল কলম সৈনিক গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল, যাতে মূখ্য ভূমকা রেখেছিলেন মল্লিক ভাই।
আশির দশক নিয়ে এ দেশের ইসলামী আন্দোলন যুগ যুগ ধরে গর্ব করতে পারবে বিংশ শতাব্দীতে সাহিত্যে নতুন করে ইসলামী ধারা প্রবর্তন করার জন্য। কিন্তু সেই ধরাবাহিকতা পরবর্তীতে আর বজায় থাকেনি, কারণ আন্দোলন সম্পর্কিত লোকগুলো দাওয়াতী কাজের উপযুক্ত জায়গা থেকে ছিটকে পড়েছিল মল্লিক ভাই বেঁচে থাকতেই। কার্যকারণ যাই থাক না কেন, সাহিত্য আন্দোলনের জন্য পত্রিকা হাতে থাকাটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ বেঁচে থাকতেই সেটা মল্লিক ভাই টের পেয়েছিলেন তীব্রভাবে। যে সোনার বাংলা ও কলম দিয়ে সাহিত্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন মল্লিক ভাই এক সময় সেখান থেকে সরে এলেন তিনি। আমি বেরিয়ে এলাম পৃথিবী থেকে। আ. জ. ম ওবায়েদুল্লাহকে খুঁজে পাওয়া গেল না কিশোরকণ্ঠের বারান্দায়। মল্লিক ভাইয়ের পর সোনার বাংলায় এসেছিলেন কবি সোলায়মান আহসান। কিন্তু তিনিও বেশিদিন থাকলেন না। অভিমানী সোলায়মান আহসান সোনার বাংলা থেকেই শুধু বিদায় নিলেন না, আন্দোলনে তার যে সক্রিয়তা ছিল সেখানেও ভাটা পড়লো। এসেছিলেন বুলবুল সরওয়ার, সেও একদিন সরে দাঁড়াল। এভাবে আসেত্ম আসেত্ম সাহিত্য আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিলেন তারা সবাই ছিটকে পড়লেন পত্রিকার জগত থেকে। এ অবস্থার আর পরিবর্তন ঘটেনি। এখন যারা সাহিত্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা সব ‘ঢাল নাই, তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার।’ তাদের হাতে কোন পত্রিকা নেই। লেখকদের কাছে যাওয়ার সূত্র বা মাধ্যম ছিল এই পত্রিকা। এই সূত্র হারিয়ে যাওয়ায় ভাটা পড়লো দাওয়াতী কাজে। লেখকদের কাছে টানার মাধ্যম না থাকায় তারা যেমন যখন তখন লেখকদের কাছে যাওয়ার সুযোগ পান না, লেখকরাও তেমনি তাদের কাছে আসার কোন প্রয়োজন বা গরজ বোধ করেন না। অবস্থাটা এখন এমন যে, লড়াকু সৈনিকরা ময়দান চষে বেড়ায় অস্ত্রহীন অবস্থায়, আর যাদের হাতে অস্ত্র আছে তারা ময়দানে আসার সময় পায় না। ফলে নতুন লেখকরা হাসান আলীম, মোশাররফ
হোসেন
খান, নাসির হেলাল, শরীফ আবদুল গোফরান বা গাজী এনামুল হকের মতো আর শপথের
কর্মী হতে পারল না। এভাবেই কেটে গেল গত দুটো দশক এবং এখনো তার কোন পরিবর্তন
ঘটেনি। নতুন লেখকরা এখন শপথের কর্মী হতে ভয় পায়। কারণ, শপথের কর্মী হলে
বাইরের ময়দানে তারা থাকবে বস্ন্যাকলিস্ট হয়ে আর ভেতরে তাদের অবস্থা হবে
‘ঘরকা মুরগি ডাল বরাবর।’ অবশ্য তাদের ভাষাটা আরো কঠোর। তারা বলে, শপথ যতদিন
না নেবে ততদিনই নাকি তাদের কদর থাকবে, শপথ নিলে রুদ্ধ হয়ে যাবে লেখা
প্রকাশের পথ। শপথহীনেরা তখন ছড়ি ঘুরাবে তাদের মাথার ওপর। ফলে ইসলামী
সাহিত্য আন্দোলন এখন একটি কঠিন বন্ধ্যা সময় অতিবাহিত করছে।
আবারো মল্লিক ভাইয়ের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। মল্লিক ভাইয়ের ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-গবেষণা, স্বপ্ন-কল্পনা সবটা জুড়েই ছিল আন্দোলন। এর বাইরে তিনি কিছুই বুঝতেন না, বুঝার প্রয়োজনও বোধ করতেন না। তার সবকিছুই আবর্তিত হতো সংগঠন ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। আর এ কাজকে সফল করার জন্য তার ছিল নিজস্ব টেকনিক ও পদ্ধতি। ছাত্র আমলেই তিনি এ অঙ্গনের কাজকে দুটো প্রধান ভাগে বিভক্ত করে অঘোষিতভাবেই তার দায়িত্বও ভাগ করে নিয়েছিলেন। গান তথা সংস্কৃতি অঙ্গনটা দেখতেন মল্লিক ভাই আর সাহিত্য অঙ্গনটা দেখার দায়িত্ব তিনি আমার কাঁধে তুলে দিয়ে স্বস্তি পেতেন। মনে হয়, তিনিই আমাকে ঢাকা মহানগর শিবিরের সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পাদক করতে সংগঠনকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, তিনিই আমাকে তখনকার জাতীয় সাহত্যি সংগঠন বিপরীতের সেক্রেটারি বানিয়েছিলেন, তিনিই আমাকে সাইমুমের সভাপতি করেছিলেন, বাংলা সাহিত্য পরিষদের ব্যবস্থাপক হওয়ার পেছনেও হয়তো তারই ভূমিকা ছিল, এমনকি হয়তো তারই হাত ছিল পৃথিবীতে ডাকার ব্যাপারেও। আর এ সবই ছিল আমার প্রতি তার স্নেহ ও ভালবাসার নিদর্শন। আশির দশকের আমরা যারা তার স্বপ্নের দোসর ছিলাম, তাদের মধ্যে থেকে এভাবেই তিনি আমাকে তার একান্ত কাছে টেনে নিয়েছিলেন। বাংলা ভাষায় আশির দশক নতুন করে যে ইসলামী ধারার সৃষ্টি করেছিল, এভাবেই তার কেন্দ্রবিন্দুতে আমাকে তিনি তুলে এনেছিলেন।
।।
আবারো মল্লিক ভাইয়ের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। মল্লিক ভাইয়ের ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-গবেষণা, স্বপ্ন-কল্পনা সবটা জুড়েই ছিল আন্দোলন। এর বাইরে তিনি কিছুই বুঝতেন না, বুঝার প্রয়োজনও বোধ করতেন না। তার সবকিছুই আবর্তিত হতো সংগঠন ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। আর এ কাজকে সফল করার জন্য তার ছিল নিজস্ব টেকনিক ও পদ্ধতি। ছাত্র আমলেই তিনি এ অঙ্গনের কাজকে দুটো প্রধান ভাগে বিভক্ত করে অঘোষিতভাবেই তার দায়িত্বও ভাগ করে নিয়েছিলেন। গান তথা সংস্কৃতি অঙ্গনটা দেখতেন মল্লিক ভাই আর সাহিত্য অঙ্গনটা দেখার দায়িত্ব তিনি আমার কাঁধে তুলে দিয়ে স্বস্তি পেতেন। মনে হয়, তিনিই আমাকে ঢাকা মহানগর শিবিরের সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পাদক করতে সংগঠনকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, তিনিই আমাকে তখনকার জাতীয় সাহত্যি সংগঠন বিপরীতের সেক্রেটারি বানিয়েছিলেন, তিনিই আমাকে সাইমুমের সভাপতি করেছিলেন, বাংলা সাহিত্য পরিষদের ব্যবস্থাপক হওয়ার পেছনেও হয়তো তারই ভূমিকা ছিল, এমনকি হয়তো তারই হাত ছিল পৃথিবীতে ডাকার ব্যাপারেও। আর এ সবই ছিল আমার প্রতি তার স্নেহ ও ভালবাসার নিদর্শন। আশির দশকের আমরা যারা তার স্বপ্নের দোসর ছিলাম, তাদের মধ্যে থেকে এভাবেই তিনি আমাকে তার একান্ত কাছে টেনে নিয়েছিলেন। বাংলা ভাষায় আশির দশক নতুন করে যে ইসলামী ধারার সৃষ্টি করেছিল, এভাবেই তার কেন্দ্রবিন্দুতে আমাকে তিনি তুলে এনেছিলেন।
।।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)