বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬

আবৃত্তি : কষ্টের লোবান


অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার


স্মৃতিচারণ: আশির দশক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক

আশির দশক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক
-আসাদ বিন হাফিজ
#স্মৃতিচারণ
ছাত্রজীবনে একটানা সাত-আট বছর মল্লিক ভাইয়ের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকার সুবাদে মল্লিক ভাইকে কাছ থেকে দেখার এক বিরল সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অনেক তিক্ত-মধুর সম্পর্কের স্মৃতি জমা হয়ে আছে এই বুকে। আমাদের সম্পর্কটা নেতা-কর্মীর নয়, ছিল বন্ধুত্বের। আমাদের মিরহাজীর বাগের সেই বেড়ার ঘরে বহুদিন আমরা একত্রে রাত্রি যাপন করেছি, এক বিছানায় ঘুমিয়েছি। মাসের পর মাস সেই ঘরে দু’জনের খাবার রেখে ভাবীসহ বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। গভীর রাতে বাসায় ফিরে সেই ঠান্ডা ভাত দু’জনে ভাগাভাগি করে খেয়েছি। সকালে ফজর পড়ে হয়তো লু&&ঙ্গ পরেই আমরা হাঁটতে বেরিয়েছি বা কারো সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগে বেরিয়েছি, এসে দেখি ভাবী দু’জনের ময়লা কাপড়গুলো ধুয়ে রোদে শুকাতে দিয়েছেন। বাংলা ভাষায় যাকে বলে ‘হরিহর আত্মা’ আমরা ছিলাম তাই। লোকজন আমাদের ডাকতো ‘মানিকজোড়’ বলে। আমাদের নাম দুটো সব সময় এক ব্রাকেটে উচ্চারিত হতো। যেখানে আসাদ আছে সেখানে মল্লিক থাকবেই, আর যেখানে মল্লিক আছে সেখানে আসাদও থাকবে, এটাই ছিল স্বতসিদ্ধ বিষয়। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজনও এটা জানতো এবং যখন-তখন আমার সাথে সে বাড়িতে মল্লিক ভাইয়ের উপস্থিতিতে কেউ অবাক হতো না।
ছাত্রজীবন শেষ করে আমি তামিরুল মিল্লাতে অধ্যাপনা শুরু করলাম। সংগঠন বললো বিআইসিতে জয়েন করতে হবে। মল্লিক ভাই আগেই বিআইসিতে জয়েন করেছিলেন। বিআইসি থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা কলম দেখাশোনা করতেন মল্লিক ভাই, আমাকে দেয়া হলো গবেষণা পত্রিকা পৃথিবী দেখার দায়িত্ব। আবারও এক অফিস, এক ঠিকানা। অফিসিয়ালি আবদুল মান্নান তালিব কলমের সম্পাদক আর জনাব এ. কে. এম নাজির আহমদ পৃথিবীর সম্পাদক থাকলেও সম্পাদনার মূল কাজ করতে হতো আমাদেরই। লেখকদের কাছে থেকে লেখা সংগ্রহ, সম্পাদনা, প্রেস যোগাযোগ, প্রম্নফ দেখা সবই করতে হতো এক হাতে। সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেলে সম্পাদকের অনুমতি নিয়ে প্রিন্টঅর্ডারও দিতাম আমরাই। বাংলাবাজারে ‘মনোরম প্রেস’ নামে একই প্রেসে ছাপা হতো কলম ও পৃথিবী। আমরা কেবল অফিসিয়াল দায়িত্ব হিসেবে নয়, আন্দোলনের স্বার্থ সামনে রেখেই এ কাজ আঞ্জাম দিতাম। এ কাজের কোন টাইমটেবল ছিল না। এই লেখকের বাসায় যাওয়া, ওই লেখকের বাসায় যাওয়া, তাদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি, তাদের সামনে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা, অফুরন্ত কাজ। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের ভাইয়েরা কে কি লিখবে, আন্দোলনের জন্য এ মুহূর্তে কোন বিষযে লেখালেখি গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করা, সেই দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া, সময়মত সে লেখা জমা দেয়ার জন্য বার বার তাগাদা দেয়া, ঢাকার বাইরের লেখকদের সাথে নিয়মিত পত্র যোগাযোগ, কাজের কি কোন শেষ আছে? এরপর আছে আরো কাজ। অফিসের কাজ শেষ হলে আমরা বসতাম সামগ্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন নিয়ে। শুরু হতো নানা চিন্তা-গবেষণা, আলাপ-আলোচনা এবং তা বাস্তবায়নের কাজ। এর কিছুদিন পর কলমের পাশাপাশি সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্বও পান মল্লিক ভাই। ফলে লেখকদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির এক অবারিত দ্বার খোলা ছিল আমাদের সামনে। আমাদের হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো আসলেই ছিল অনেক মধুর ও স্বর্ণালী। প্রাণের প্রবাহে সজীব ও উদ্দাম।
এর কিছুদিন পর আ.জ.ম ওবায়েদুল্লাহ ও মাসুমুর রহমান খলিলী খুলে দিলেন আরো এক নতুন দ্বার। জন্ম নিল কিশোরকণ্ঠ। ওবায়েদ ভাইয়ের তাড়নায় বিনা পারিশ্রমিকে মাসের পর মাস কিশোরকণ্ঠ সম্পদানা করে দিয়েছি। কেউ একজন জমা লেখাগুলো বাসায় দিয়ে যেতো, সম্পাদনা শেষে আবার তা পাঠিয়ে দিতাম কিশোরকণ্ঠের ঠিকানায়। ওবায়েদ ভাইয়ের নির্দেশে প্রতি সংখ্যায়ই কিছু না কিছু লিখতেও হতো। এরপর অভিন্ন স্বপ্ন নিয়েই তিনি বের করলেন আরো একটি পত্রিকা, মাসিক অঙ্গীকার ডাইজেস্ট। সেখানেও লিখতে হতো পরিকল্পিতভাবে। এভাবেই কাটছিল ব্যস্ত সময়। কলম, পৃথিবী, সোনার বাংলা, কিশোরকণ্ঠ, অঙ্গীকার ডাইজেস্ট সবটাতেই আমরা মিলেমিশে সময় দিয়েছি, পরস্পর পরামর্শ করেছি, একে অন্যের সহযোগিতা করেছি, আর এসবই করেছি একটি সফল সাহিত্য আন্দোলনের স্বপ্ন ও সংকল্প নিয়ে। এমনকি দৈনিক সংগ্রামের সাহিত্য পাতা এবং মাসিক ফুলকুঁড়িতে যেন আমাদের ভাইদের লেখা বেশি করে ছাপা হয় সে জন্য নিজেরা লেখা সংগ্রহ করে তা সাজজাদ হোসাইন খান ও জয়নুল আবদীন আজাদ বা শরীফ আবদুল গোফরান ভাইয়ের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। সাহিত্য আন্দোলনের জন্য পত্রিকা হাতে থাকাটা যে কত জরুরি সে সময় আমরা তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি। বিপরীত উচ্চারণ ও পরে বাংলা সাহিত্য পরিষদের মতো সংগঠন আর ওইসব পত্রিকা ছিল বলেই আশির দশকে ইসলামী আন্দোলনের সপক্ষে একদল কলম সৈনিক গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল, যাতে মূখ্য ভূমকা রেখেছিলেন মল্লিক ভাই।
আশির দশক নিয়ে এ দেশের ইসলামী আন্দোলন যুগ যুগ ধরে গর্ব করতে পারবে বিংশ শতাব্দীতে সাহিত্যে নতুন করে ইসলামী ধারা প্রবর্তন করার জন্য। কিন্তু সেই ধরাবাহিকতা পরবর্তীতে আর বজায় থাকেনি, কারণ আন্দোলন সম্পর্কিত লোকগুলো দাওয়াতী কাজের উপযুক্ত জায়গা থেকে ছিটকে পড়েছিল মল্লিক ভাই বেঁচে থাকতেই। কার্যকারণ যাই থাক না কেন, সাহিত্য আন্দোলনের জন্য পত্রিকা হাতে থাকাটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ বেঁচে থাকতেই সেটা মল্লিক ভাই টের পেয়েছিলেন তীব্রভাবে। যে সোনার বাংলা ও কলম দিয়ে সাহিত্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন মল্লিক ভাই এক সময় সেখান থেকে সরে এলেন তিনি। আমি বেরিয়ে এলাম পৃথিবী থেকে। আ. জ. ম ওবায়েদুল্লাহকে খুঁজে পাওয়া গেল না কিশোরকণ্ঠের বারান্দায়। মল্লিক ভাইয়ের পর সোনার বাংলায় এসেছিলেন কবি সোলায়মান আহসান। কিন্তু তিনিও বেশিদিন থাকলেন না। অভিমানী সোলায়মান আহসান সোনার বাংলা থেকেই শুধু বিদায় নিলেন না, আন্দোলনে তার যে সক্রিয়তা ছিল সেখানেও ভাটা পড়লো। এসেছিলেন বুলবুল সরওয়ার, সেও একদিন সরে দাঁড়াল। এভাবে আসেত্ম আসেত্ম সাহিত্য আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিলেন তারা সবাই ছিটকে পড়লেন পত্রিকার জগত থেকে। এ অবস্থার আর পরিবর্তন ঘটেনি। এখন যারা সাহিত্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা সব ‘ঢাল নাই, তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার।’ তাদের হাতে কোন পত্রিকা নেই। লেখকদের কাছে যাওয়ার সূত্র বা মাধ্যম ছিল এই পত্রিকা। এই সূত্র হারিয়ে যাওয়ায় ভাটা পড়লো দাওয়াতী কাজে। লেখকদের কাছে টানার মাধ্যম না থাকায় তারা যেমন যখন তখন লেখকদের কাছে যাওয়ার সুযোগ পান না, লেখকরাও তেমনি তাদের কাছে আসার কোন প্রয়োজন বা গরজ বোধ করেন না। অবস্থাটা এখন এমন যে, লড়াকু সৈনিকরা ময়দান চষে বেড়ায় অস্ত্রহীন অবস্থায়, আর যাদের হাতে অস্ত্র আছে তারা ময়দানে আসার সময় পায় না। ফলে নতুন লেখকরা হাসান আলীম, মোশাররফ
হোসেন খান, নাসির হেলাল, শরীফ আবদুল গোফরান বা গাজী এনামুল হকের মতো আর শপথের কর্মী হতে পারল না। এভাবেই কেটে গেল গত দুটো দশক এবং এখনো তার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। নতুন লেখকরা এখন শপথের কর্মী হতে ভয় পায়। কারণ, শপথের কর্মী হলে বাইরের ময়দানে তারা থাকবে বস্ন্যাকলিস্ট হয়ে আর ভেতরে তাদের অবস্থা হবে ‘ঘরকা মুরগি ডাল বরাবর।’ অবশ্য তাদের ভাষাটা আরো কঠোর। তারা বলে, শপথ যতদিন না নেবে ততদিনই নাকি তাদের কদর থাকবে, শপথ নিলে রুদ্ধ হয়ে যাবে লেখা প্রকাশের পথ। শপথহীনেরা তখন ছড়ি ঘুরাবে তাদের মাথার ওপর। ফলে ইসলামী সাহিত্য আন্দোলন এখন একটি কঠিন বন্ধ্যা সময় অতিবাহিত করছে।
আবারো মল্লিক ভাইয়ের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। মল্লিক ভাইয়ের ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-গবেষণা, স্বপ্ন-কল্পনা সবটা জুড়েই ছিল আন্দোলন। এর বাইরে তিনি কিছুই বুঝতেন না, বুঝার প্রয়োজনও বোধ করতেন না। তার সবকিছুই আবর্তিত হতো সংগঠন ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। আর এ কাজকে সফল করার জন্য তার ছিল নিজস্ব টেকনিক ও পদ্ধতি। ছাত্র আমলেই তিনি এ অঙ্গনের কাজকে দুটো প্রধান ভাগে বিভক্ত করে অঘোষিতভাবেই তার দায়িত্বও ভাগ করে নিয়েছিলেন। গান তথা সংস্কৃতি অঙ্গনটা দেখতেন মল্লিক ভাই আর সাহিত্য অঙ্গনটা দেখার দায়িত্ব তিনি আমার কাঁধে তুলে দিয়ে স্বস্তি পেতেন। মনে হয়, তিনিই আমাকে ঢাকা মহানগর শিবিরের সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পাদক করতে সংগঠনকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, তিনিই আমাকে তখনকার জাতীয় সাহত্যি সংগঠন বিপরীতের সেক্রেটারি বানিয়েছিলেন, তিনিই আমাকে সাইমুমের সভাপতি করেছিলেন, বাংলা সাহিত্য পরিষদের ব্যবস্থাপক হওয়ার পেছনেও হয়তো তারই ভূমিকা ছিল, এমনকি হয়তো তারই হাত ছিল পৃথিবীতে ডাকার ব্যাপারেও। আর এ সবই ছিল আমার প্রতি তার স্নেহ ও ভালবাসার নিদর্শন। আশির দশকের আমরা যারা তার স্বপ্নের দোসর ছিলাম, তাদের মধ্যে থেকে এভাবেই তিনি আমাকে তার একান্ত কাছে টেনে নিয়েছিলেন। বাংলা ভাষায় আশির দশক নতুন করে যে ইসলামী ধারার সৃষ্টি করেছিল, এভাবেই তার কেন্দ্রবিন্দুতে আমাকে তিনি তুলে এনেছিলেন।
।।

কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ- শিশুদের কণ্ঠে গান


শিশু উৎসবের টাইটেল সং

শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬

দাও খোদা দাও আবার আমায় ওমর দারাজ দিল

কবি আসাদ বিন হাফিজের লিরিকে শিল্পী মশিউর রহমানের একটি গান

একই প্রভূর সৃষ্টি

সব মানুষ একই স্রষ্টার সৃষ্টি, তাসত্ত্বেও এত ভেদাভেদ কেন? সাম্যবাদের এই আওয়াজ তুলেছেন কবি আসাদ বিন হাফিজ, গানটি গেয়েছেন সাইমুম শিল্পীরা

প্যানভিশন টিভিতে কবি আসাদ বিন হাফিজের আলোচনা


কবি আসাদ বিন হাফিজের নির্বাচিত কবিতা

অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার

আমি আমার জনগণকে আরেকটি অনিবার্য বিপ্লবের জন্য
প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যেভাবে রুখে দাঁড়ায় আক্রান্ত দুর্বল
বিধ্বস্ত জাহাজ যাত্রীরা আঁকড়ে ধরে ভাসমান পাটাতন
তেমনি একাগ্রতা নিয়ে
আমি আপনাদের আসন্ন বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি।

বিপ্লব মানেই যুদ্ধ
বিপ্লব মানে তিল তিল বাঁচতে শেখা
বিপ্লব মানে ভাসমান রক্তপদ্ম, প্রস্ফুটিত কৃষ্ণচূড়া
বিপ্লব মানে জীবন
বিপ্লব মানে জীবনের জন্য আমরণ লড়াই।

আমি আপনাদেরকে আরেকটি অনিবার্য বিপ্লবের জন্য
প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি
যে বিপ্লবে প্রতিটি নাগরিকের জীবন হয়
একেকজন যোদ্ধার জীবন
প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি মানুষ হয়
একেকজন আমূল বিপ্লবী
প্রতিটি যুবক
নারীর বাহুর পরিবর্তে স্বপ্ন দেখে উত্তপ্ত মেশিনগানের
আর রমনীরা
সুগন্ধি রুমালের পরিবর্তে পুরুষের হাতে তুলে দেয়
বুলেট, গ্রেনেড।

আমি আমার জনগণকে
অনিবার্য সেই বিপ্লবের জন্য
প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি।

বিপ্লব মানেই যুদ্ধ
বিপ্লব মানেই সংগ্রাম, সংঘাত
বিপ্লব মানে শিরায় শিরায় উদ্দাম ঝড়
ঝড়ো হাওয়া, টর্নেডো, সাইক্লোন
বিপ্লব মানে কল্লোলিত সমুদ্রের শোঁ শোঁ অশান্ত গর্জন
বিপ্লব মানে আশা, সফলতা ও বিজয়ের অমোঘ পুষ্পমাল্য।

আমি আমার জনগণকে আরেকটি অনিবার্য বিপ্লবের জন্য
প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি
যে বিপ্লব সাধিত হলে মানুষের শরীর থেকে
খসে পড়ে শয়তানের লেবাস
জল্লাদের অশান্ত চিত্তে জন্ম নেয় বসরাই গোলাপ
অর্ধ পৃথিবীর দুর্দান্ত শাসক
কেঁপে উঠে ফোরাত কূলের কোন
অনাহারী কুকুরের আহার্য চিন্তায়।

যে বিপ্লব সাধিত হলে
কন্যা হন্তারক অভাবী পিতাদের জন্য পরওয়ারদিগার
খুলে দেন রহমতের সব ক'টি বদ্ধ দুয়ার।
তখন কোন অভাব আর অভাব থাকে না
উদ্বৃত্ত সম্পদ প্রদানের জন্য
পাওয়া যায় না কোন ক্ষুধাতুর বনি আদম।

অন্ধকার যত ঘনীভূত হয় ততই উজ্জ্বল হয় বিপ্লবের সম্ভাবনা
একটি কৃষ্ণ অন্ধকার মানেই
সামনে অপেক্ষমান একটি প্রস্ফুটিত সূর্যোদয়
একটি আরক্ত সন্ধ্যা মানেই
বেগবান বোররাক চেপে ধেয়ে আসছে কোন কুসুম সকাল
একটি কৃষ্ণ মধ্যরাত মানেই
তার উল্টো পিঠে বসে আছে কোন মৌমাছি দুপুর
একটি মিথ্যা মানেই
তাকে ধাওয়া করছে কোন দ্রুতগামী সত্যাস্ত্র
একটি অবাধ্য সমাজ মানেই
সামনে নূহের প্লাবন, অনাগত ধ্বংস
আরেকটি নতুন সভ্যতার আমূল উদ্বোধন।

আমি আপনাদেরকে সেই
অনিবার্য বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি
দিন ও রাত্রির প্রতিটি আবর্তনে
শোনা যায় যে বিপ্লবের অশ্বখুরধ্বনি
ঋতুচক্রের প্রতিটি আবর্তনে
শোনা যায় যে বিপ্লবের অশ্বখুরধ্বনি
মাস ও বৎসরের প্রতিটি ঘূর্ণিপাকে
শোনা যায় যে বিপ্লবের অশ্বখুরধ্বনি
যুগ ও কালের প্রতিটি ঘূর্ণিপাকে
শোনা যায় যে বিপ্লবের অশ্বখুরধ্বনি
শতাব্দীর প্রতিটি পরতে পরতে যে বিপ্লবের পলিময় মৃত্তিকা।

আমি আমার জনগণকে সারাক্ষণ বুকের মধ্যে
বিপ্লবের চাষ করতে বলছি
যে বিপ্লবের চাষ করলে
প্রজ্জ্বলিত অগ্নি হয় জাফরান বীথি
যে বিপ্লবের চাষ করলে
নীলনদের আহার্য হয় অবাধ্য ফারাও
আবরাহার হাতি হয় পাখির খোরাক
চুরমার হয়ে যায় রোম ও পারস্যের বিশাল সালতানাতের দাম্ভিক চূড়া।
ব্যর্থ হয়ে যায় কারুণের ধন
কল্পিত স্বর্গদ্বারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকে
অবাধ্য সাদ্দাতের দশটি আঙ্গুল।
আর কারাগারের কয়েদী বন্দী ইউসুফ
কুদরতের ইশারায় রাজ মুকুট পরে হয়ে যান বাদশা কেনান।

আমি আমার জনগণকে
আসন্ন সেই বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

যেখানে অন্ধকার সেখানেই বিপ্লব
যেখানে ক্লেদাক্ত পাপ ও পঙ্কিলতার সয়লাব
সেখানেই বিপ্লব
যেখানে নগ্নতা ও বেহায়াপনার যুগল উল্লাস
সেখানেই বিপ্লব
যেখানে মিথ্যার ফানুস
সেখানেই বিপ্লব
যেখানে শোষণ ও সূদের অক্টোপাশ ক্যান্সার
সেখানেই বিপ্লব
বিপ্লব সকল জুলুম, অত্যাচার আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে
বিপ্লব অন্তরের প্রতিটি কুচিন্তা আর কুকর্মের বিরুদ্ধে।

আমি আপনাদের সকলকে
বিপ্লবের মৌসুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।

মৌসুম ছাড়া কোন বসন্ত আসে না, বর্ষা আসে না
মৌসুম ছাড়া ফোটে না কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, শিমুল
সময়কে ধারণ করতে না পারলে গর্ভবতী হয় না কোন রমনী
ফলবতী হয় না সবুজ ধানের শীষ
সীম আর মটরদানা
সময়কে ধারণ করতে না পারলে সফল হয় না বিপ্লবের আরাধ্য কাজ।

কৃষ্ণ মধ্যরাত পেরিয়ে আজ বিংশ শতাব্দী ছুটছে প্রত্যুষের দিকে
সাইবেরিয়ার বরফ খন্ডে মুখ লুকোচ্ছে পাশবতন্ত্র
আ'দ ও সামুদ জাতির মত টেক্সাসের ঘোড়াগুলোকে
ঘিরে ফেলেছে আল্লাহর গজব।
ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, বসনিয়া, কাশ্মীর, পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তরে
লাউডস্পীকারের সামনে দাঁড়িয়ে গেছে যুগের মুয়াজ্জিন
আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে এখনি আজান হবে
সে আওয়াজের নিচে হারিয়ে যাবে
এটম ও কামানের ধ্বনি
গড়িয়ে যাওয়া অজুর পানিতে ভিজে অকেজো হয়ে পড়বে
সব ক'টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।
আবাবিল পাখির ঝাঁক গিলে খাবে আকাশ ফড়িং
রাজহাঁসগুলো শামুকের পরিবর্তে গিলে খাবে জীবন্ত টর্পেডো
সাদা কবুতরের পাখনায় আটকা পড়ে
থেমে যাবে আনবিক ঝড়
আর বেহেশ্ত্ থেকে শহীদেরা
আপনাদের বিজয় অভিনন্দন জানানোর জন্য
মার্চপাস্ট করতে করতে এসে দাঁড়িয়ে যাবে রাস্তার দু'পাশে।

তাদের প্রত্যেকের হাতে থাকবে একটি করে রক্ত গোলাপ
সজীব ও তরতাজা
চিত্তহারী ঘ্রাণময়
আমি আপনাদের সেই আনন্দিত
অনিবার্য বিপ্লবের পতাকা উত্তোলনের জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।














অবশেষে দেশপ্রেমিকরাই জয়ী হয়

ইতিহাস পড়ে পড়ে জেনেছি চিরকাল
অবশেষে দেশপ্রেমিকরাই জয়ী হয়।
বুলেট, বেয়নেট, গুম, খুন, হত্যা, সন্ত্রাস,
কারাগার, নির্যাতনÑ
সেই বিজয়-পথের একেকটি ফলকমাত্র।

কারাগার মানে বিপ্ল¬বের সুতিকাগার।
আসন্ন সংগ্রামের পরিকল্পনা প্রণয়নের
    নিরাপদ আবাসস্থল।
জনতার কোলাহল মুক্ত নিরিবিলি পরিবেশ।

একজন জাতীয় নেতাকে কারাগারে দেয়া মানেÑ
মুক্তিকামী মানুষের স্বপ্ন পূরণের জন্য
সেই পরিকল্পনা প্রণয়নের একটু সুযোগ করে দেয়া।
একজন জাতীয় নেতাকে কারাগারে দেয়া মানেÑ
অব্যর্থ আঘাত হানার জন্য একজন বিপ্ল¬বীকে
প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার সামান্য অবকাশ দেয়া।
একজন জাতীয় নেতাকে কারাগারে দেয়া মানেÑ
গণবিরোধী সরকারের জন্য
আধুনিক সমরাস্ত্রের চেয়েও তিনি যে ভয়ংকর
এ কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করা।
আর
একজন দেশপ্রেমিক নেতার ফাঁসির আদেশ দেয়া মানেÑ
তাঁর বীরত্ব ও সাহসের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য
            রাজ্য জুড়ে
মুক্তিপাগল মানুষের কাছে ঢেড়া পিটিয়ে দেয়া।



আর বুলেট বেয়নেটের প্রশ্ন?
একটি বুলেট বড়জোর একটি বুকই
এফোঁড় ওফোঁড় করতে পারে।
কিন্তু একজন শহীদের একফোঁটা রক্ত
নিমিষে লক্ষ কোটি জনতার মনে
জ্বেলে দিতে পারে বিপ্ল¬বের দাউদাউ আগুন।
সে আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে পারে
    কুচক্রীর নরম ফোমের গদী।
চৈত্রের উত্তপ্ত অরণ্যে দেয়াশলাইয়ের
    সামান্য এক শালাকা
যেমন মুহূর্তে সৃষ্টি করতে পারে
    লেলিহান দাবানল
তেমনি মাত্র একজন শহীদের রক্ত
বিক্ষুব্ধ জনতার উত্তোলিত হাতগুলোকে
অবলীলায় বানিয়ে দিতে পারে টান টান মিসাইল।




















মূলধারা

রাতের আঁধারে চুপচাপ পড়ে আছে
        বিবর্ণ পান্ডুর চাঁদ
চাঁদ নয়, যেন কোন মরা রূপচাঁদা
আধেক খেয়েছে যার কালো কোন কীট,
        পড়ে আছে আঁধ
    যেন সব মৃত বস্্নিয়া
লাশের শরীরে উড়াউড়ি করে
        পুঁজখেকো মাছি
মনে হয়, সুনসান ভয়ার্ত রাতে
আজদাহা ভয়াল দ্বীপে মৃতবৎ একাÑ
        শুধু একা পড়ে আছি।

মেঘরঙ বিষণœ সময়ের পেটে
পড়ে আছে আমাদের ধূসর জীবন
মাঝরাতে একা এক উদাসী বাউল
পাড়ি দিতে গিয়ে কোন গোবী মরুভূমি
ফেঁসে গেছে সময়ের ফাঁদে।
বিশ্বাসের ধ্রুবতারা
কুয়াশার ধূসর জালে হয়েছে আটক।
চেতনার মিহিস্বরে বেদনার বিরহ বিলাপ।

গান নয়, সুর নয়, একতারা মনÑ
নির্মম কালের স্রোতে হু হু করে কাঁদে,
            শুধু কাঁদে।
ফ্যাকাশে ঘোলাটে চোখে চেয়ে থাকে
                আদম সুরাত
কারা যেন তুলে দেয় চেতনার সোনারোদে
                অদৃশ্য গরাদ
রাত গিয়ে রাত আসে, আসে না প্রভাত।
তস্কর হানা দেয় লোকালয় জুড়ে
লালা ঠোঁটে লোভী যত বাদুড়েরা ওড়ে
মানুষ ঘুমের ঘোরে স্বপ্নহীন কাটায় প্রহর।
চেতনার কড়িকাঠে বেঁধেছে কি বাসা কোন ঘুণ?
রূপসীর কালো চুলে অসহ্য উকুন?
কার অপরাধে, নিস্তেজ হয়ে আসে ঈমানী আগুন?
কার পাপে ব্যর্থ হয় শহীদের খুন?
কালের দেয়ালে দেখি সেই কথা লেখা হয়ে আছে
দীঘল দীর্ঘশ্বাসে সেই কথা অনর্গল
        ভাসে শুধু ভাসে।
ক্ষয়রোগে সবকিছু ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়
বিবর্ণ বুকের হাড়ে স্মৃতি রয়ে যায়।
নি:শ্বাসে নি:শ্বাসে তবু আমি কবি
বুনে যাই উম উম আদুরে চাদর
        বিশ্বাসের ঘর।
নিরবধি বারোমাসÑ
চেতনার মিহিদানা করে যাই চাষ।
মাঝরাতে বাউলের কাঁেদ একতারাÑ
মরে নাই...মরে নাই ..দেখো ওই নীলিমায়
জাগে ধ্রুবতারা। ম্রিয়মান তবুয়ো আজন্ম অনড়
শীলাদৃঢ় বিশ্বাসে অটল পাথর
সারারাত ডেকে ডেকে বলে বলে যায়Ñ
সকলি বিনাশ হয়
একা শুধু বেঁচে থাকে তবু মূলধারা।

শতাব্দী প্রভাতে তাই মানুষের পাড়া
জেগে ওঠে, হেসে ওঠে বিশ্বাসের আলো
দূর হয় মরা ঘুম, রাতের কালো
বেজে উঠে দেশে দেশে ভোরের আজান
জনপদে জাগে দেখো পুষ্পের ঘ্রাণ
আড়মোড়া ভেঙে জাগে শত জনপদ।
সকালের মিঠে রোদে পড়ে যায় সাড়া
মরে নাই ... মরে নাই ... দেখো মূলধারা।












বিজয়ের চুমু

যে রমনী দশ মাস দশদিন গর্ভধারণ করতে রাজি নয়
রাজি নয় প্রসবকালীন অসহ্য কষ্ট ও যন্ত্রণা ভোগ করতে
পৃথিবীতে সে কোনদিন মা হওয়ার
গৌরব অর্জন করতে পারে না।

যে মৃত্তিকা লাঙলের ফলার আঁচড় খেতে রাজি নয়
রাজি নয় বৃষ্টির জলে ¯œান করতে,
পৃথিবীতে সে কোনদিন সবুজ উদ্যান রচনার
গৌরব অর্জন করতে পারে না।

যে বিপ্লবী জেল, জুলুম, টিয়ারগ্যাস ও গুলি খেতে রাজি নয়
রাজি নয় ফাঁসির মঞ্চে সাহসের দুন্দুভি বাজাতে
পৃথিবীতে সে কোনদিন সাফল্যের
গৌরব অর্জন করতে পারে না।

বাঁচতে হলে মরতে শেখো, জীবন তোমার পায়ে চুমু খাবে।

মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ২৭ জুলাই, ২০১৩, রাত ২টা।



আজ আর কোন কবিতা নয়

আপনারা মাফ করবেন আমাকে।
আসলেই কবিতা শোনাবার মত কোন অবস্থা নেই আমার।
আমি একেবারেই বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত। ড্রাকুলা সময় আমাকে
নিঃস্ব ও ফকির করে পথে বসিয়ে দিয়েছে। কিছু বুঝে ওঠার
আগেই আমি বন্দী হয়ে গেছি হন্তারক সময়ের হাতে।

বিশ্বাস করুন, আমার অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না।
আমার একটা অতীত ছিল। সম্ভ্রান্ত আর মানবিক অতীত।
অভাবের সাথে ঘরগেরস্থালি করতে হয়নি আমাদের।
সংসারের কাজ সেরে বিকালে ফুটবল খেলা আর রাতে
গাজী কালু চম্পাবতীর পুঁথি বা কবির লড়াই শোনার মত
অঢেল সময় ছিল আমাদের পূর্বপুরুষের হাতে।
হন্তারক সময় ভুলিয়ে ভালিয়ে সেই আসর থেকে আমাদের
তুলে এনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে বাঘবন্দী সময়ের খাঁচায়।

এখন যেদিকে তাকাই চাপ চাপ অন্ধকার আর প্রতারণা।
প্রতারণা আমাদের মেধা ও মননে, আমাদের শিরায় শিরায়।
পথে পথে গলাগলি করে হেঁটে বেড়ায় অন্ধকার ও প্রতারণা।
তারা ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকে শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে কক্ষে।
অফিসে, আদালতে, হাটে-মাঠে সর্বত্র অন্ধকার ও প্রতারণা।
শীতের হিমেল হাওয়ার মত তারা শহর, নগর, বন্দর সব
ঘিরে ফেলেছে। অনায়াসে ঢুকে গেছে গণভবন ও বঙ্গভবনে।

বিচারকের এজলাসে এজলাসে অন্ধকার ও প্রতারণা।
শহুরে বাবুদের কোটের পকেটে অন্ধকার ও প্রতারণা।
সচিব ও আমলাদের টেবিলের ড্রয়ার আর টাইয়ের নিচে
চাপ চাপ অন্ধকার ও প্রতারণা ঘাপটি মেরে ওঁৎ পেতে আছে।
আর আমাদের সবচে কাছের ও দূরের মানুষ,
জনগণনন্দিত নেতাদের ধোপদুরস্ত আদ্দি পাঞ্জাবীর পকেটের
থোক থোক অন্ধকার ও প্রতারণা আমাদের অন্ধ করে দিয়ে
কী চমৎকার ডুগডুগি বাজাচ্ছে। তাদের ঠোঁটের ভেতর,
জিহবার নিচে, চুলের ডগায়, প্রতিটি লোমকুপে
গুদামজাত হয়ে আছে ভয়ংকর অন্ধকার ও কুৎসিত প্রতারণা।
যেদিকে তাকাই সর্বত্রই অন্ধকার ও প্রতারণা কিলবিল করছে।
এ অবস্থায় কেমন করে আপনাদের কবিতা শোনাবো বলুন?

বিশ্বাস করুন, পথে পথে ওঁৎ পেতে থাকা ভয়ঙ্কর মৃত্যু-আতঙ্ক আর
বেডরুমে হানা দেয়া গোপন আততায়ীর ভয়ে আমি দিশেহারা।
যে দেশে রাজপথে নিত্যদিন খুনের মহড়া চলে
যে দেশে সত্য কথা বললে যেতে হয় জেলে
সে দেশে আপনারা কেউ আমাকে কবিতা পড়তে বলবেন না।
আপনারা কেন বুঝেন না, কবি হওয়ার পরও আমি একজন মানুষ,
আমারও বাঁচতে ইচ্ছে করে। তাই আমি
আপনাদের সকলের কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাচ্ছি,
আজ আর কোন
কবিতা নয়।
আমাকে বাঁচতে দিন।




সমঅধিকারের জন্য


সমঅধিকারের জন্য যারা কাঁদে
তারা কাবায় আসে না কেন?
কি নেই এখানে?
পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য যাদুর মত যখন
আছড়ে পড়ে চোখের কার্ণিশ আর হৃদয়ের বারান্দায়,
তখন বিভেদের সব দেয়াল ভোজবাজির মতই কি
মিলিয়ে যায় না মহামিলনের মহানীলিমায়?

কাবার দেয়ালের মত চকচকে নাইজেরিয়ান রমনী,
ইরানের লাল টকটকে গোলাপগুচ্ছ,
আরবী তাজি ঘোড়ি, রাশিয়ার পেজাতুলোর মত
বরফকুচি, সুদানী বাদামী চামড়া,
থাইল্যান্ডের কারুকার্যখচিত অমূল্য তৈজষপত্র,
প্রাণবন্ত জাপানী রোবট, চাইনিজের চারুময়
চীনামাটির তশতরীসদৃশ চেহারায়
লেপ্টে থাকা নয়ন যুগল,
সোমালিয়ান স্ট্যাচুতে লাগানো জোড়া মার্বেল,
ইথিউপিয়ার কালো গ্রানাইট পাথর,
রাজহংসী আমেরিকাÑ কি নেই এখানে?

দিন ও রাত্রির প্রতিটি প্রহর,
প্রতিটি মুহূর্ত,
প্রতিটি সেকেন্ড-ক্ষণ
কাবা প্রদক্ষিণ করছে বিচিত্রসব নারী ও নরÑ
অনবরত, বিরামহীন।
কি মধ্য দুপুর, কি মধ্যরাত, সন্ধ্যা-সকাল,
শুক্র-মঙ্গল, ভেদাভেদহীন, অভিন্ন হৃদয়।

নারী নয়, নর নয়, ইরাকী-বার্মিজ নয়,
বাঙালি-পাকিস্তানি নয়, শুধুই মানুষ করে
কাবায় তাওয়াফ।
চোখের পানিতে ধুয়ে ফেলে
হিংসা ও ঘৃণার কালি
মানুষ জড়িয়ে ধরে আদমের হাত
উধাও চকচকে লোভ, স্বার্থের সংঘাত
কি নেই এখানে?

পাশ্চাত্য পুঁজিবাদের চোখে যখন সবই পণ্য,
এমনকি মানুষ এবং মানবতাও
ভেজালবিরোধী অভিযান হয় না বলেই
সভ্যতার শপিংমলে আজো তা শোভা পায়।
বস্তুত: পাশ্চাত্যের মাকাল ফলের
তিক্ত জারক খেতে খেতে মানুষ ভুলে গেছে
আঙুর ও আপেলের স্বাদ।



















নমরুদের ঘিলু

হে মাবুদ, আমরা আমাদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছি।
আমাদের জান, মাল, সব, সব।
শুধু দ্বীনকে ভালবাসার কারণে অমানুষিক জুলুমের শিকার হয়েছি।
বেধড়ক লাঠিপেটা খেয়েছি। টিয়ারসেল খেয়েছি।
আমাদের ধরে ধরে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।
গুম করা হচ্ছে। আমাদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে রাজপথ।

আমাদের নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলা দিয়ে
কারাগারে প্রেরণ করা হচ্ছে।
তাদের বিচারের নামে চলছে নাটক।
 চলছে জঘন্যতম প্রহসন।

মাবুদ আমার! আমরা হাসিমুখে জেলের জুলুম সহ্য করছি।
শুধু তোমার দ্বীনের জন্য হাসিমুখে বুকে নিচ্ছি বুলেট।
পৃথিবী ক্রমেই আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে আসছে মাবুদ!
রিমান্ডের নামে আমাদের ওপর যে বর্বরতা চালানো হচ্ছে,
যে পৈশাচিকতা চালানো হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়।
মাবুদ, তোমার দ্বীনকে ভালবাসি বলে আমাদের হাতে
হাতকড়া পরানো হচ্ছে। পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরানো হচ্ছে।
তোমার হাবীবের সুন্নাত মুখে থাকায় কমবখতের দল
সেই দাড়ি ধরে টানাটানি করছে, উপহাস করছে।

তোমার দ্বীনকে ভালবাসি বলে ওরা আমাদের চোখ বেঁধে
মারতে মারতে ফেলে রাখছে শক্ত কংক্রীটের মেঝেতে।
আমাদের রক্তে সেই মেঝে লাল হচ্ছে।
তোমার দ্বীনকে ভালবাসি বলে নরাধমরা আমাদের
উলঙ্গ করে ঝুলিয়ে রাখছে কড়িকাঠের সাথে।
হাত ও পায়ের নখ উপড়ে নিচ্ছে।
ইলেক্ট্রিকের চেয়ারে বসানো হচ্ছে।

এক মামলায় খালাস পেলে
জেলগেট থেকেই ধরে নিয়ে নতুন করে মামলা দিচ্ছে।

ছেলেকে মুক্ত করতে গেলে আটক করছে বাপকে।
বাপকে দেখতে গিয়ে গ্রেফতার হচ্ছে ছেলে। আর
কোন মা ও বোন যদি এইসব নিরপরাধ ব্যক্তির
মুক্তি দাবী করে, তবে রেহাই পাচ্ছে না তারাও।

হে আমার রব, হে মাবুদ মাওলা! আমাদের
কষ্টের কথাগুলো বর্ণনা করার ভাষা আমার না থাকতে পারে,
কিন্তু তোমার তো অজানা নয় কোনকিছু।
মাওলা গো! আর তো পারি না সইতে এ অসহ জ্বালা।
‘আহাদ, আহাদ’ বলতে বলতে আমরা যদি নিঃশেষ হয়ে যাই,
তাতে তোমার কী লাভ হবে মালিক! তুমি কি পাঠাবে না
তোমার পক্ষীবাহিনী আবরাহার হস্তিকূল ধ্বংস করতে?
মাবুদ, কখন আসবে তোমার মদদ?
কখন ঝরবে তোমার রহমতের বৃষ্টি?
আর যে পারি না প্রভু।

হে আল্লাহ,
আমাদের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছি তোমার জন্য,
এবার তুমি তোমার ওয়াদা পূর্ণ করো।
গায়েবী মদদ পাঠাও।
কুদরতি সাহায্য পাঠাও।
আর আমাদের পরীক্ষা নিও না প্রভু।
আমরা যে বড় দুর্বল, বড়ই কমজোর।
মাবুদ, নমরুদের ঘিলু তছনছ করার জন্য
একটি মশাই তো যথেষ্ট।

















ঈমানের মূল্য

মাকসুদা, অন্ধকারে বাতি নিভিয়ে চুপচাপ বসে আছি বিছানায়।
ভাবছি তোমার কথা। আমার মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে, তুমি
গারদের মেঝেতে বসে কাটাচ্ছ বিনিদ্র প্রহর। কী অপরাধ তোমার?
পবিত্র রমজানে বসে বসে কোরানের আলোয় সাজাচ্ছিলে হৃদয় ভূ-ভাগ
এই কি অপরাধ? শুধু আমি কেন, তোমাকে যারা চেনে তারা সবাই জানে,
তোমার মত একজন পরোপকারী পূণ্যবান মানুষ এ সমাজে সত্যি দুর্লভ।
এই ভাল মানুষ হওয়াটাই কি অপরাধ? যৌবন ঝুলিয়ে যারা ট্রয়নগরীর
ধ্বংস ডেকে আনে তুমি সেখানে হেজাবের পবিত্রতা ছড়িয়ে দাও।
এই পবিত্রতা ছড়ানোই কি তোমার অপরাধ?

আমি ভাবতে পারছি না, আমি এখন কোন্্ অসভ্য নগরে বসবাস করছি।
নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে রোজা রাখা অপরাধ! শরিয়ত মানা অপরাধ?
আর এই অপরাধে রোজা রাখা বয়স্ক মহিলাদের ধরে নিয়ে
হাজতে পুরতে হবে? ওরা কি জানে জীবন থেকে মৃত্যুর দূরত্ব কতো?
যখন থামবে এই দেহঘড়ি তারপর কী হবে? নধর শরীর হবে পঁচা লাশ।
দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য সেই লাশ মাটিচাপা দেবে মানুষ। (ওরা তো আর
ফেরাউন নয় যে, ওদের দেহ মানুষ মমি করে রাখবে?)

মাকসুদা, মিন্টুরোডের যেখানটায় এখন তুমি আছো, তার পাশের
প্রাসাদগুলোতে থাকেন যে মান্যবর মন্ত্রীরা, সামান্য এই দেয়ালের
বাঁধা যদি অপসারিত হয়, যদি তুমি বনে যাও তার বাসিন্দা,
তাহলে আজ যারা তোমাকে ধরে ছুঁড়ে দিয়েছে গারদখানায়, ওরাই
তোমার পায়ের নিচে গড়াগড়ি খাবে স্যার স্যার বলে। এটাই ইতিহাস।
ক্ষমতার মসনদের দূরত্ব তো এক দেয়ালের বেশী নয়। বুঝি না,
ওরা কেন যে তোমাকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য হন্যে হয়ে গেছে!
কেন ধরে ধরে তোমাদের চেনাচ্ছে মিন্টুরোড?

মাকসুদা! দেখতে দেখতে এসে গেলো কদরের রাত, তুমি জেলখানায়।
কংক্রিটের মেঝেতে লুটিয়ে কাঁদছো তুমি, আর সে কান্নায় কেঁপে উঠছে
আল্লাহর আরশ। তোমার অশ্রুতে এসে মিশছে এক অপার্থিব সৌরভ।
জেলখানার দেয়াল টপকে সে সৌরভ এসে ঢুকছে আমার নাসিকায়।
তুমি কাঁদছো, সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে বাংলার মাঠে, ঘাটে।
তুমি কাঁদছো, ইথারে ভর করে সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে প্রতি ঘরে ঘরে।
তুমি কাঁদছো, সে সৌরভ ঢুকে যাচ্ছে মানুষের হৃদয়ের গভীরে।
মনে হয় ফেরেশতারা বেহেশতী সেন্টের কৌটা উপুড় করে দিয়েছে।

যারা বাংলার মায়েদের শান্তিতে ইফতার করতে দেয়নি, যারা রমজানের
পবিত্র দিনে আপন সন্তানকে বঞ্চিত করেছে মায়ের আদর থেকে, যারা
হেজাবের অসম্মান করেছে, কোরআনের মজলিশ থেকে মেয়েদের
ধরে নিয়ে যারা অপমান করেছে পবিত্র কোরআনের, যারা ঈদের
আনন্দকে ভরিয়ে দিয়েছে হাহাকারের রোদনে, বাংলার মুসলমানদের
কী দায় ঠেকেছে তাদের নেতা বানানোর? দুশ্চরিত্র প্রতারকদেরই
বার বার ভোট দিতে হবে, তাদের হাতেই তুলে দিতে হবে গদী, তবে
আল্লাহর গযব ফেরাবো কী দিয়ে? কী দিয়ে ফেরাবো অনাগত
ধ্বংস-প্রলয়? আমার ঈমানের কী কোন মূল্য নেই?


















অনিশেষ ত্রাণকর্তা

গুম, খুন, হত্যা, সন্ত্রাস করে
মুক্তিকামী জনতাকে দাবিয়ে রাখা যায়
এমন খবর বলো, কে শুনেছে কবে?
জেল, জুলুম, অপহরণ করে
কে কবে পেরেছে করতে বন্দী স্বাধীন হৃদয়?
মিথ্যার কোরাস দিয়ে সত্য কি ঢেকে রাখা যায়?
তবে কেন এই মিথ্যার অপলাপ, প্রহসন?
কেন সূর্যকে বন্দী করার এতো আয়োজন?

আমরা কি কিছুই দেখিনি প্রলয়ের রাতে?
কাউকে কিছু না বলে, জাতিকে অসহায় ফেলে
তোমরা তো পালিয়েছিলে নিরাপদ জোনে।
যখন চারপাশে ভয়াল মৃত্যু নাচছিল, কে ছিল সহায়?
কে ওদের বুঝিয়েছিল, এরা সব নিরীহ মানুষ।
প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কারা বলেছিল, দয়া করে
এদের মারবেন না, এরা সব দেশপ্রেমিক?

সাড়ে ছয় কোটি মানুষের যারা ছিল পাশে পাশে
শান্তির পতাকা হাতে যারা ছিল একান্ত সহায়
যাদের কারণে নিরাপদ ছিল আমাদের জীবন
রক্ষা পেয়েছিল আমাদের ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ
আমাদের পরিজন, স্ত্রী-সন্তান, সাড়ে নয় মাস
যাদের ডান্ডিকার্ড নিয়ে মুক্তিরা ছিল নিরাপদ, যারা
সাড়ে ছয় কোটি মানুষের ছিল অনিশেষ ত্রাণকর্তা,
আর্মিরা ধরে নিয়ে গেলে যারা ছাড়িয়ে আনতো
যাদের সাথে ছিল না আমাদের বিবাদ বিসম্বাদ
তাদের নামে দিচ্ছো আজকে অলীক অপবাদ!

আমরা লড়াই করেছি বাংলার কৃষক, শ্রমিক, জনতা
তোমরা ওপারে বসে খেয়েছো উদ্বাস্তু ক্যাম্পের খুদ
আমরা মরেছি, ধরেছি অস্ত্র, মেরেছি শত্রু সেনা
লড়াইয়ে তোমরা আসোনি তাই নিজেরা তো মরলে না।

্এমপি মরেনি, মরেনি দেশের কোন জাঁদরেল নেতা
তারামন বিবি ইজ্জত দিয়ে এনেছে স্বাধীনতা।
স্বাধীনতাপদক পেয়েছে সে, তোমার ভান্ডার খালি
নিজের দোষ ঢাকতে আজকে অন্যকে দাও গালি।
তোমার লুটের হয় না দোসর, ওরা যে সত্যবাদী
তাই দুর্দিনের সে ত্রাণকর্তাকে বানাও অপরাধী।

আজকে ওদের জেলে পুরছো, দিচ্ছো ওদের ফাঁসি
কে ছিল পাশে, পলাতক কে, জানে তা বঙ্গবাসী।
ওরা পাশে ছিল আমরা ছিলাম সাড়ে ছয় কোটি প্রাণ
প্রতারক চক্র আজকে তাদের দিচ্ছে বলিদান।
অনিশেষ ত্রাণকর্তা ছিল যারা সে কঠিন দুর্দিনে
আমরা আজো বাধা যে তাদের ভালবাসার ঋণে।




























ভালবাসি এই মাটি

ভালবাসি এই মাটি, মানুষের মন
ভালবাসি বাংলার প্রিয় জনগণ
ভালবাসি নদীর এই কল-কলতান
ভালবাসি পাখিদের সুমধুর গান
আমার কবিতা গান তাদের জন্য
তাদেরকে ভালবেসে আমি ধন্য।

ভালবাসি বাংলার বন-উপবন
ভালবাসি কৃষকের মধুর স্বপন
ভালবাসি তাহাদের স্বাধীন চেতন
ভালবাসি শ্রম ঘাম কঠিন জীবন
তাহাদের সকলের পণ অনন্য
তাদেরকে ভালবেসে আমি ধন্য।

ভালবাসি ফুলপাখি পাহাড় নদী
শাপলা শালুক আর ভরা জলধি
ভালবাসি নাও নদী জলভরা ঘাট
ভালবাসি প্রাণকাড়া ফসলের মাঠ
ভালবাসি উৎসব ভরা জনারণ্য
তাদেরকে ভালবেসে আমি ধন্য।
















সর্পবিষয়ক

স্বৈরাচারের ন্যায় ভীতু কোন জন্তু
পৃথিবীতে আর কোনদিন জন্মগ্রহণ করেনি।

তার চারদিকে কেবলই ভয়ের মাতম।
দরজার চৌকাঠে ভয়, জানালার গ্রীলে ভয়
মখমলের বিছানায় ভয়, বাথটাবে ভয়
ভয় কিলবিল করে নর্তকীর নাচের মুদ্রায়।

স্বৈরাচারের ন্যায় ভীতু কোন জন্তু
পৃথিবীতে আর কোনদিন জন্মগ্রহণ করেনি।
মায়ের কোলে শিশু নিশ্চিন্তে ঘুমায়
আর স্বৈরাচার আতঙ্কে তড়পায়।
সে নিজের হাতকে বিশ্বাস করে না,
চোখকে বিশ্বাস করে না,
এমনকি নিজের নি:শ্বাসকেও বিশ্বাস করে না।
ঘুমের ভেতর ভয় তাকে তাড়া করে
দুধের বাটিতে চুমুক দিতে ভয় পায় স্বৈরাচার
দুধের বাটিতে সে দেখে লাল লাল তাজা রক্ত।

স্বৈরাচারের ন্যায় ভীতু কোন জন্তু
পৃথিবীতে আর কোনদিন জন্মগ্রহণ করেনি।
সে সবচে বেশি ভয় পায় মানুষকে।
ভয় পায় গণজাগরণ ও গণজোয়ারকে।
আর তাই মানুষ দেখলেই সে তার
পোষা কুকুরগুলোকে লেলিয়ে দেয় মানুষের বিরুদ্ধে।
সাপের মত বিষাক্ত ফণা তুলে ছুটে আসে ছোবল হানতে।
আর বাঁচার জন্য মানুষ তখন বাধ্য হয়
দল বেঁধে স্বৈরাচার ও তার কুকুরদের তাড়া করতে।














কবিকে ভয় পাওয়ার কী আছে
তুমি আমাকে কারাগারে বন্দী রেখেছো। কিন্তু কেন?
তুমি কি আমাকে ভয় পাও? কবিকে ভয় পাওয়ার কী আছে?
কবির কাছে থাকে কলম। কলমের ডগায় থাকে সত্য ও সুন্দর।
তবে কি তুমি সত্য ও সুন্দরকে ভয় পাও?

কবির কাছে আর কি থাকে? আর থাকে প্রেম ও ভালবাসা।
তুমি কি ভালবাসাকে ভয় পাও? প্রেমকে ভয় পাও?
যে প্রেম ও ভালবাসাকে ভয় পায় সে মানুষ নয়, ইবলিশ।
মানুষের প্রকাশ্য শত্রু সে। মানুষ তার থেকে পরিত্রাণ চায়।

একজন কবিকে কারাগারে পাঠিয়ে তুমি নিজেই নিজেকে
সত্য ও সুন্দরের প্রতিপক্ষে দাঁড় করিয়ে দিলে।
অসুন্দরকে কে ভালবাসে? কে ভালবাসে প্রেতরাত্রির অট্টহাসি?
একজন কবিকে বন্দী করে তুমি জগতকে জানিয়ে দিলে
তুমি প্রেম ও ভালবাসার দুশমন, সত্য ও সুন্দরের তুমি
আজন্ম প্রতিপক্ষ। মানুষের তুমি প্রকাশ্য শত্রু।

তাহলে ভালবাসাময় পৃথিবী থেকে তোমাকে তো নির্বাসন
নিতেই হবে। দুশমনকে কে কবে বুকে আগলে রাখে?
এবার বুঝেছি, এত সৈন্য, পাইক পিয়াদা, গোলাবারুদ থাকতেও
কেন তুমি কবিকে ভয় পাও? কেন সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকো?
কেন একটা উদভ্রান্ত তোমার হৃদয়?

কাজীপাড়া, মিরপুর। ৩০ জুন ২০১৩।















অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে হু হু করে ঢুকে পড়ছে মৃত্যু
লাল মৃত্যু, নীল মৃত্যু, হলুদ ও বেগুনি মৃত্যু
সাদা মৃত্যু, ধূসর মুত্যু, বোবা ও মুখর মৃত্যু।

আমাদের অর্থনীতির কন্ঠনালীতে প্রতিদিন
চাপ বাড়ছে অজস্র মৃত্যুর।
শেয়ার মার্কেটের এক ছোবলেই পয়ঁত্রিশ লক্ষ
পরিবার ছটফট করছে অসহ্য মৃত্যু যন্ত্রণায়।
মাড়োয়ারীদের দালালরা অবলীলায় ওদের হাতে
তুলে দিচ্ছে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য।
কোলকাতার প্রেসে ছাপা হচ্ছে আমাদের
সোনামনিদের জন্য পাঠ্যপুস্তক আর
আমাদের প্রেস কর্মচারীরা অন্ধকার লাইটপোস্টের
নিচে বসে বসে তারার আলোয় সাপলুডু খেলছে।

মৃত্যু এসে ছোবল হানছে আমাদের চেতনায়, মগজে
আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য
গড়াগড়ি খাচ্ছে পায়ের নিচে। বেহুলার ঘরে
যেভাবে ঢুকে পড়েছিল সুতানটি সাপ
সেভাবেই আমাদের লেখকদের বুকের
খাঁচার ভেতর ঢুকে পড়েছে হীনমন্যতার পাপ।
তাদের কলমে এখন খেলা করে মনসার দেবী।
আর বিশ্বভারতীর কবুতর ঢাকার প্রাসাদগুলোর
খোপে খোপে বাকুম বাকুম খেলে।

মৃত্যু এসে হানা দিচ্ছে সংস্কৃতির জটিল জঙ্গমে।
ঢাকায় বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময়
ভীনদেশী জাতীয় পাখি বর্ণাঢ্য স্টেডিয়ামে যখন
পেখম তুলে নাচছিল তখন জানি না আমাদের
জাতীয় পাখি দোয়েল দুবলার চরে বসে
গোলপাতা দিয়ে চোখের পানি মুছছিল কিনা?

তবে এটুকু জানি, ভীনদেশী শিল্পীর ভীড়ে
হারিয়ে গিয়েছিল আমাদের সব
নামীদামী তারকা শিল্পীরা।
আর আমাদের
সব মান সম্ভ্রম ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে
দেশের মান্যবর মন্ত্রী মহোদয়
গুলিস্তানের ল্যাংড়া ফকিরের মত
মেঝেতে বসে
হাটুতে তাল ঠুকেছিলেন অনবরত।

এইসব দেথে দেখে শুধু মনে হয়,
আমার স্বদেশ এখন দুর্বৃত্তের হাতের পুতুল
রক্তে কেনা স্বদেশ আমার
লুট হচ্ছে প্রতিদিন প্রতি রাতে
লুট হচ্ছে বোনের ইজ্জত ও সম্ভ্রম,
লুট হচ্ছে সবুজ পতাকা।

হে যুবক, যদি স্বাধীনতা চাও
তোমার পেশী টান টান করে দাঁড়াও এবার।















মহীরুহ মরে না

প্রাচীন বৃক্ষেরা দৃশ্যত: একে একে মরে যায়,
কিন্তু আদৌ মরে কি? নবীন কিশলয় বৃক্ষ থেকে
সময়ের ব্যবধানে হয়ে গেলে সুবিশাল মহীরুহ
মৃত্তিকার অভ্যন্তরে দূর দূরান্ত পর্যন্ত তার
ছড়িয়ে পড়ে সুপুষ্ট শিকড়। কে না জানে,
সেখানেই বেঁচে থাকে তার প্রজ্ঞার সুরভী।

নবীন বৈশাখ পেলে, ভেজা মাটির স্পর্শ পেলে
কর্তিত কান্ডের চারদিক ঘিরে কিংবা
দূরাগত স্বপ্নের ভেতর লুকিয়ে থাকা বোধিবৃক্ষ
সবুজ স্বপ্নের ডানা মেলে মৃত্তিকার পলি স্তর উপড়ে
বেরিয়ে আসে কৌতুহলী কোমল কিশলয়।
এভাবেই জন্ম থেকে জন্মান্তরে কাল থেকে কালান্তরে
ভাবী প্রাচীন বৃক্ষেরা বার বার মহীরুহ হয়ে যায়।

তোমার অভিন্ন সুর ও স্বরÑ অভিন্ন স্বপ্নের বুনন
পুের অভিন্ন সৌরভ
ফলভারে নুয়ে পড়া কান্ডের অভিন্ন দৃঢ়তা
বাতাসের কানে কানে বলে যায়
না, না, বৃক্ষেরা মরে না, মহীরুহ মরে না।
মারা যায় ঘাসফুল, আগাছার উপদ্রব
ঐতিহ্যের শিকড় ছেঁড়া ছাকল-বাকল।

তাইতো পাললিক ইতিহাস ঘেটে দেখতে পাই
প্রাচীন বৃক্ষ থেকে জন্ম নেয় বৃক্ষের অযুত বীথি
যেমন আলাওল থেকে আল মাহমুদ
ড. শহীদুল¬াহ থেকে আকরাম খাঁ, গোলাম মোস্তফা
অভিন্ন চেতনাবাহী নজরুল, ফররুখ
এমনকি আশি ও নব্বইয়ের বোধিবৃক্ষের সারি
মূলধারার কবিকূল, শিল্পের অভিন্ন দোসর।
যেমন তুমি।




আমার কবিতা




আমি স্বপ্ন দেখি প্রেম আর ভালবাসায় পরিপূর্ণ এক সমাজের। স্বপ্ন দেখি শোষণহীন এক সভ্যতার। ভালবাসি সুন্দরকে, ঘৃণা করি অসুন্দর। মানুষের নীচতা আমাকে কষ্ট দেয়। দুঃখ পাই মানুষের ভন্ডামী দেখলে। ভাল লাগে প্রকৃতির ¯িœগ্ধ শ্যামলিমা, সবুজ অরণ্য। ভাল লাগে পাখির কূজন, শীতল ছায়া আর উন্মুক্ত প্রান্তর। সরলতাকে শ্রদ্ধা করি আমি, তবে পছন্দ করি সচেতন মানুষ। বিশ্বাস করি নীতি ও নৈতিকতায়। খুশী হই কাউকে আপন অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হতে দেখলেÑ আরো খুশী হই অন্যের অধিকারের প্রতি উপযুক্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখানোয়। মানুষকে ভালবাসি, ভালবাসি আল্ল¬াহর সীমাহীন সৃষ্টি। আমার এইসব বোধ-বিশ্বাস, আমার এইসব ভাললাগা মন্দলাগা নিয়েই আমার কবিতা, আমার যত সুর আর ছন্দ।
সোনালী ফসল আর সবুজ শ্যামলীমায় ভরা আমার এ দেশ। এ দেশের মাটি শ্যামলরঙ রমনীর মতই ¯িœগ্ধ-কোমল অযুত সম্ভাবনায় ভরা। এখানে মাটির স্পর্শ পাওয়া মাত্র বীজ থেকে জন্ম নেয় বৃক্ষের কচি চারা। সম্পদ আর সমৃদ্ধি দেখে চকচকে লোভ নিয়ে তাই এখানে বারবার হানা দিয়েছে বিদেশী ডাকাত। অথচ আমার দেশের পলিমাটির মত নরম আর সরল মানুষগুলো আজো ক্ষুধা ও দারিদ্রের কশাঘাতে জর্জরিত। অজ্ঞানতা তাদের ভূষণ, সরলতা অলংকার। তাদের এই অজ্ঞানতা ও সরলতাকে পুঁজি করে সম্পদের পাহাড় গড়ছে দেশী-বিদেশী প্রতারকের দল। আমার কবিতা এই মাটি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। আমি তাদের শোনাতে চাই অধিকারের কথা, ঐতিহ্যের কথা।
স্বপ্নহীন কংকালসার নিরন্ন মানুষকে জাগানোর গানে মুখর আমার কবিতা। আমাদের আবার জাগতে হবে। নিষ্প্রাণ চোখে ফুটিয়ে তুলতে হবে আশার বিদ্যুৎকণা। আমি চাই, আমার কবিতা হোক ঝিমিয়ে পড়া মানুষের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দুরন্ত সাহস ও প্রেরণা। আমি যে সুখী ও সমৃদ্ধ স্বদেশের স্বপ্ন দেখি আমার কবিতায় ভাষা পাক আমার সে পল্ল¬বিত স্বপ্ন।
নতুন এক শতাব্দীতে প্রবেশ করেছি আমরা। এ শতাব্দী হবে সত্য ও সুন্দরের। যে সুন্দরের পরাগ দিয়ে আমার নবী পৃথিবীতে এনেছিলেন স্বর্গের সুখ। গড়েছিলেন প্রেম, ভালবাসা আর মমতায় ভরা এক আশ্চর্য্য ভূবন। পৃথিবী আবার সে সুখের সাগরে ডুব দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। দিকে দিকে শোনা যাচ্ছে সে বিপ্ল¬বের প্রতিধ্বনি। সমস্ত কলুষ-কালিমা মুছে ফেলে প্রেমময় সে পৃথিবী গড়ার জন্য আমি আমার কবিতাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি যুদ্ধের মাঠে।
এ যুদ্ধ বাঁচার যুদ্ধ, জীবনকে পল্লবিত ও সুশোভিত করার যুদ্ধ। এ যুদ্ধ সত্য ও সুন্দরের স্বপক্ষে, নীতি ও নৈতিকতার স্বপক্ষে। পাশবিকতাকে পরাভুত করে মানবিকতার বিজয় ঘোষণার জন্য হোক আমাদের সংগ্রাম। কৃষ্ণ অন্ধকার মাড়িয়ে কুসুম সকালের দিকে হোক আমাদের অভিযাত্রা। আমার কবিতা স্বপ্নহীন মানুষের চোখে মেখে দিক স্বপ্ন-কাজল, আশাহীন বুকে আনুক আশার জোয়ার। জিঘাংসার বদলে পৃথিবী আবার মুখরিত হোক ভালবাসার জয়গানে, আবার ফুটুক গোলাপ মানুষের প্রাণে। এই স্বপ্ন-ধ্যানে কাটুক আমার আয়ুর বয়স।
আমার ‘কাব্যসমগ্র’ প্রকাশলগ্নে সবাইকে জানাই আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। আপনারা আমার সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধা ও ভালবাসা গ্রহণ করুন। দোয়া করুন আমি যেন আপনাদের অকথিত আবেগকে ফুটিয়ে তুলতে পারি আমার কলমের ডগায়। বিশ্বাস করুন, আপনারা কারো গোলাম নন, পরম প্রভুর একান্ত প্রেমের ফসল, আশরাফুল মাখলুকাত। আর দুনিয়ার সবকিছুই সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য। এ পৃথিবীকে আনন্দময় করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। জাতিতে জাতিতে, ধর্মে ধর্মে গালাগালি নয়, গলাগলি করেই এ পৃথিবীকে সংঘাত ও হানাহানি মুক্ত করতে হবে। ঘৃণার বদলে দিতে হবে প্রেম, যেমন দিয়েছিলেন আমাদের নবী। নিজের ও অন্যের খেয়ালখুশি মত চলার কারণেই দুনিয়া জুড়ে জ্বলছে অশান্তির দাউদাউ দাবানল। এ থেকে মুক্তির একটাই পথ, সবাই আমরা চলবো এক আল্লাহর হুকুমে, তাঁরই নবীর মারফত পাওয়া বিধানের আলোকে।
আসুন, সব ভেদাভেদ ভুলে প্রেমের প্রভুর প্রেমের পরশ মেখে নিই নিজ অঙ্গে। এ পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য করার জন্য ঘৃণার বদলে করি প্রেমের চাষ। নবীর দেখানো পথে হেঁটে জীবনকে করি আনন্দময়, আর লাভ করি পরম প্রভুর অবারিত রহমত। আমার কবিতা, আমার সুর আর ছন্দ এ পথেই ডাকবে আপনাকে। ডাকতেই থাকবে, ডাকতেই থাকবে। ভাল থাকবেন, ধন্যবাদ।
আসাদ বিন হাফিজ
ঢাকা, ১ জানুয়ারী ২০১৬।



































স্বাধীনতা থেকো ২৩শে জুন

সিরাজের রক্তে পা ডুবিয়ে যে ইংরেজ
হার্মাদের মত ঢুকে পড়েছিল আমাদের ঘরে
আজ বার বার তাদের কথাই মনে পড়ছে শুধু।
কী বেদনাবিধুর সে দিন!
কী বেদনাবিধুর সে রাত!
সমুদ্রের পর সমুদ্র পেরিয়ে কেমন করে
একদল ডাকাত এসে দখল করে নিতে পারে
দুর্ভেদ্য দুর্গ, রাজকোষ, সিংহাসন?
কেমন করে ছিনিয়ে নিতে পারে মানুষের
আজন্ম প্রেম, স্বাধীনতা, বারুদ ও বল্ল¬ম?

আজ তেইশে জুন।
বুকের ভেতর থেকে বুলেটের মত
বেরিয়ে আসছে ঘৃণা ও ক্ষোভের বারুদ।
বেরিয়ে আসছে কামানের গোলার মত অসহ্য ক্রোধ।
কি হত ভুমিকম্পে তলিয়ে গেলে বেঈমানের শহর!
কি হত গযবের আগুনে পুড়ে গেলে
লোভের লকলকে জিভ?
ধিক মিরজাফর! ধিক জগতশেঠ!
ধিক রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, ঘষেটি বেগম।
ধিক বিদেশী পা চাটা কুকুর, দেশদ্রোহী দালালের দল।

তেইশে জুন মানেই কুকুরের উত্থান।
তেইশে জুন মানেই
পোষা সাপের ছোবলে নীল মৃত্যু আলিঙ্গন।
তেইশে জুন মানেই
শহরে শহরে স্বাধীনতাখোর দালালের আবির্ভাব।


তারপর ইতিহাস।
দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী।
রক্ত আর ঘামের পুরাণ।
বঙ্গোপসাগর ভরা কান্নার কলরোল।
পাহাড়ে পাহাড়ে দীঘল দীর্ঘশ্বাস।
সবুজ ঘাসের মাঠ প্রস্ফুটিত কৃষ্ণচূড়া।
তারপর রক্ত, রক্ত, রক্ত.....

তারপর ঘুরে দাঁড়ানো।
তারপর নতুন ইতিহাস।
তারপর টিপু সুলতান।
তারপর তিতুমীর।
তারপর ফকির বিদ্রোহ।
তারপর সিপাহী বিপ¬ব।
তারপর হিমালয়, প্রমত্ত পদ্মা।
তরঙ্গের পর তরঙ্গ।
তারপর হাজী শরিয়ত উল¬াহ।
তারপর গান্ধী, প্যাটেল, কায়েদে আযম।
তারপর মাওলানা মোহাম্মদ আলী, শওকত আলী।
তারপর হাজী মহসিন, চিত্তরঞ্জন।
তারপর নজরুল, আব্বাসউদ্দিন
তারপর ভারত, পাকিস্তান।
 তারপর স্বাধীনতা এবং
তারপর নেপথ্যে ইংরেজ।

হায় স্বাধীনতাখেকো তেইশে জুন।

রচনাকাল : ২০১১