আমি স্বপ্ন দেখি প্রেম আর ভালবাসায় পরিপূর্ণ এক সমাজের। স্বপ্ন দেখি শোষণহীন এক সভ্যতার। ভালবাসি সুন্দরকে, ঘৃণা করি অসুন্দর। মানুষের নীচতা আমাকে কষ্ট দেয়। দুঃখ পাই মানুষের ভন্ডামী দেখলে। ভাল লাগে প্রকৃতির ¯িœগ্ধ শ্যামলিমা, সবুজ অরণ্য। ভাল লাগে পাখির কূজন, শীতল ছায়া আর উন্মুক্ত প্রান্তর। সরলতাকে শ্রদ্ধা করি আমি, তবে পছন্দ করি সচেতন মানুষ। বিশ্বাস করি নীতি ও নৈতিকতায়। খুশী হই কাউকে আপন অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হতে দেখলেÑ আরো খুশী হই অন্যের অধিকারের প্রতি উপযুক্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখানোয়। মানুষকে ভালবাসি, ভালবাসি আল্ল¬াহর সীমাহীন সৃষ্টি। আমার এইসব বোধ-বিশ্বাস, আমার এইসব ভাললাগা মন্দলাগা নিয়েই আমার কবিতা, আমার যত সুর আর ছন্দ।
সোনালী ফসল আর সবুজ শ্যামলীমায় ভরা আমার এ দেশ। এ দেশের মাটি শ্যামলরঙ রমনীর মতই ¯িœগ্ধ-কোমল অযুত সম্ভাবনায় ভরা। এখানে মাটির স্পর্শ পাওয়া মাত্র বীজ থেকে জন্ম নেয় বৃক্ষের কচি চারা। সম্পদ আর সমৃদ্ধি দেখে চকচকে লোভ নিয়ে তাই এখানে বারবার হানা দিয়েছে বিদেশী ডাকাত। অথচ আমার দেশের পলিমাটির মত নরম আর সরল মানুষগুলো আজো ক্ষুধা ও দারিদ্রের কশাঘাতে জর্জরিত। অজ্ঞানতা তাদের ভূষণ, সরলতা অলংকার। তাদের এই অজ্ঞানতা ও সরলতাকে পুঁজি করে সম্পদের পাহাড় গড়ছে দেশী-বিদেশী প্রতারকের দল। আমার কবিতা এই মাটি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। আমি তাদের শোনাতে চাই অধিকারের কথা, ঐতিহ্যের কথা।
স্বপ্নহীন কংকালসার নিরন্ন মানুষকে জাগানোর গানে মুখর আমার কবিতা। আমাদের আবার জাগতে হবে। নিষ্প্রাণ চোখে ফুটিয়ে তুলতে হবে আশার বিদ্যুৎকণা। আমি চাই, আমার কবিতা হোক ঝিমিয়ে পড়া মানুষের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দুরন্ত সাহস ও প্রেরণা। আমি যে সুখী ও সমৃদ্ধ স্বদেশের স্বপ্ন দেখি আমার কবিতায় ভাষা পাক আমার সে পল্ল¬বিত স্বপ্ন।
নতুন এক শতাব্দীতে প্রবেশ করেছি আমরা। এ শতাব্দী হবে সত্য ও সুন্দরের। যে সুন্দরের পরাগ দিয়ে আমার নবী পৃথিবীতে এনেছিলেন স্বর্গের সুখ। গড়েছিলেন প্রেম, ভালবাসা আর মমতায় ভরা এক আশ্চর্য্য ভূবন। পৃথিবী আবার সে সুখের সাগরে ডুব দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। দিকে দিকে শোনা যাচ্ছে সে বিপ্ল¬বের প্রতিধ্বনি। সমস্ত কলুষ-কালিমা মুছে ফেলে প্রেমময় সে পৃথিবী গড়ার জন্য আমি আমার কবিতাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি যুদ্ধের মাঠে।
এ যুদ্ধ বাঁচার যুদ্ধ, জীবনকে পল্লবিত ও সুশোভিত করার যুদ্ধ। এ যুদ্ধ সত্য ও সুন্দরের স্বপক্ষে, নীতি ও নৈতিকতার স্বপক্ষে। পাশবিকতাকে পরাভুত করে মানবিকতার বিজয় ঘোষণার জন্য হোক আমাদের সংগ্রাম। কৃষ্ণ অন্ধকার মাড়িয়ে কুসুম সকালের দিকে হোক আমাদের অভিযাত্রা। আমার কবিতা স্বপ্নহীন মানুষের চোখে মেখে দিক স্বপ্ন-কাজল, আশাহীন বুকে আনুক আশার জোয়ার। জিঘাংসার বদলে পৃথিবী আবার মুখরিত হোক ভালবাসার জয়গানে, আবার ফুটুক গোলাপ মানুষের প্রাণে। এই স্বপ্ন-ধ্যানে কাটুক আমার আয়ুর বয়স।
আমার ‘কাব্যসমগ্র’ প্রকাশলগ্নে সবাইকে জানাই আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। আপনারা আমার সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধা ও ভালবাসা গ্রহণ করুন। দোয়া করুন আমি যেন আপনাদের অকথিত আবেগকে ফুটিয়ে তুলতে পারি আমার কলমের ডগায়। বিশ্বাস করুন, আপনারা কারো গোলাম নন, পরম প্রভুর একান্ত প্রেমের ফসল, আশরাফুল মাখলুকাত। আর দুনিয়ার সবকিছুই সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য। এ পৃথিবীকে আনন্দময় করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। জাতিতে জাতিতে, ধর্মে ধর্মে গালাগালি নয়, গলাগলি করেই এ পৃথিবীকে সংঘাত ও হানাহানি মুক্ত করতে হবে। ঘৃণার বদলে দিতে হবে প্রেম, যেমন দিয়েছিলেন আমাদের নবী। নিজের ও অন্যের খেয়ালখুশি মত চলার কারণেই দুনিয়া জুড়ে জ্বলছে অশান্তির দাউদাউ দাবানল। এ থেকে মুক্তির একটাই পথ, সবাই আমরা চলবো এক আল্লাহর হুকুমে, তাঁরই নবীর মারফত পাওয়া বিধানের আলোকে।
আসুন, সব ভেদাভেদ ভুলে প্রেমের প্রভুর প্রেমের পরশ মেখে নিই নিজ অঙ্গে। এ পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য করার জন্য ঘৃণার বদলে করি প্রেমের চাষ। নবীর দেখানো পথে হেঁটে জীবনকে করি আনন্দময়, আর লাভ করি পরম প্রভুর অবারিত রহমত। আমার কবিতা, আমার সুর আর ছন্দ এ পথেই ডাকবে আপনাকে। ডাকতেই থাকবে, ডাকতেই থাকবে। ভাল থাকবেন, ধন্যবাদ।
আসাদ বিন হাফিজ
ঢাকা, ১ জানুয়ারী ২০১৬।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন